সাইফুল সামিন
বিশ্বনেতারা নিউইয়র্কে জড়ো হয়েছেন। তাঁদের উপস্থিতিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলতি অধিবেশনে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পাবে বলে আগেই আভাস মিলেছে। বিশ্বনেতারা সোচ্চার হলে মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়বে। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে শুধু উদ্বেগ আর নিন্দাই যথেষ্ট নয়; শাস্তিরও দাবি উঠেছে।
খোদ জাতিসংঘই বলছে, মিয়ানমারের রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর দেশটির সামরিক-বেসামরিক লোকজন জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছে। এই জাতিগত নিধনযজ্ঞে ইতিমধ্যে কয়েক শ লোক প্রাণ হারিয়েছে। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে চার লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন বন্ধে দেশে দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে মিয়ানমারকে শাস্তির আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে মিনমিন সুরে কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া ও চীন প্রকাশ্যে মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অপর দুই সদস্য যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সহিংসতা বন্ধে মিয়ানমারকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে। এর বাইরে বিভিন্ন দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি মিয়ানমারকে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ থামাতে বলছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে নিছক উদ্বেগ-নিন্দার চেয়ে বেশি কিছু আশা করেছেন মানবাধিকারকর্মীরা।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ মিয়ানমারের ওপর সুনির্দিষ্ট অবরোধ আরোপ করুক—এমনটাই চায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। দেশটির ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও দাবি সংস্থাটির। তবে নিরাপত্তা পরিষদ এই ধরনের কোনো প্রস্তাব পাস করবে বলে মনে হয় না। এমন বাস্তবতায় এইচআরডব্লিউর এশিয়া অ্যাডভোকেসি পরিচালক জন সিফটন বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা করতে হবে।’
সিফটন বলেন, ‘মিয়ানমারের জেনারেলদের থামাতে আমরা সবকিছু করছি।’
সিফটন বলেন, ‘মিয়ানমারের জেনারেলদের থামাতে আমরা সবকিছু করছি।’
নীতিনির্ধারকেরা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিতে অনাগ্রহী বলে মত সিফটনের। এর কারণ, নীতিনির্ধারকেরা এই ভেবে উদ্বিগ্ন যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে শায়েস্তা করলে দেশটির গণতন্ত্রে ফেরার প্রক্রিয়া বিপদাপন্ন হবে।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ নেই। অথচ এই যুক্তরাষ্ট্রই ১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় এবং ২০১৪ সালে ইরাকের কুর্দিস্তানে গণহত্যা বন্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিল।
সামরিক পদক্ষেপের কথা বাদ দিলে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে এইচআরডব্লিউর সিফটন বলেন, মিয়ানমারের জেনারেলদের সহিংস আচরণ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ দরকার।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আগ্রহ নেই। অথচ এই যুক্তরাষ্ট্রই ১৯৯৫ সালে বসনিয়ায় এবং ২০১৪ সালে ইরাকের কুর্দিস্তানে গণহত্যা বন্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিয়েছিল।
সামরিক পদক্ষেপের কথা বাদ দিলে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে এইচআরডব্লিউর সিফটন বলেন, মিয়ানমারের জেনারেলদের সহিংস আচরণ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ দরকার।
কঠোর পদক্ষেপের মধ্যে মিয়ানমারের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যেতে পারে। তাঁদের সম্পত্তি জব্দ করা যেতে পারে। এ ছাড়া সব ধরনের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি, সহায়তাসহ মিয়ানমারের ওপর বিদ্যমান অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারিত করা যেতে পারে।
মিয়ানমারের জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তাদের নাম কালো তালিকায় তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এইচআরডব্লিউ। সংস্থাটির কর্মকর্তা সিফটন বলেন, মিয়ানমারের জেনারেলদের বিরুদ্ধে জাপান, সুইডেন, নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির ভাষণকে সামনে রেখে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, সহিংসতা বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য এটাই তাঁর শেষ সুযোগ। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে সু চি যা বলেছেন, তাতে বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বরং তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিভ্রান্ত ও বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। এরপরও কি মিয়ানমার শাস্তির আওতার বাইরে থেকে যাবে?
নিউজউইক, বিবিসি, সিএনএন ও বার্তা সংস্থা রয়টার্স অবলম্বনে